ক্যালেন্ডার বদলানোর আর আট-দশটা বছরের মতো নয় ২০২০। শুধু নিকট ভবিষ্যত নয়, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বারবার গল্প হয়ে ফিরবে বিদায়ী সালটি। এই বছরটিকে বরণ করার সময় কেউ ভাবেনি যে, বছরটি মানব জাতির জন্য এতটা বিষময় হবে। ২০২০ সালে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ কোভিড-১৯ বা মরণব্যাধী করোনাভাইরাস। পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী, প্রায় ৪০০ কোটি মানুষকে মাসের পর মাস ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য করেছে এই মহামারী। মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। আরও কত মানুষের জীবন কেড়ে নিয়ে করোনা তার সংহার তাণ্ডব বন্ধ করবে তা এখনও কেউ বলতে পারছে না।
তবুও ঘরের দেয়ালে আর টেবিলের ডেস্কে সময় এলো ক্যালেন্ডার পাল্টে দেয়ার। একটি বছর যখন চলে যায়, আমরা ফিরে দেখি বড় ঘটনাগুলো। সেখানে আমরা ভাললাগা খুঁজি। নতুন বছর আসার কিছুদিন পরই হয়তো আগের বছরের কথা ভুলতে থাকি আমরা। কিন্তু ২০২০ সাল বিশ্বের প্রতিটি মানুষ মনে রাখবে মহামারী করোনার জন্য। বিদায়ী ২০২০, ২০-এ বিষক্ষয় না হলে রয়ে গেল বিষাদময়। গত একটি বছরে উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো নিয়ে ভাবতে বসলে শুধুই চোখে ভাসবে হারানোর স্মৃতি।
আজ রাত পেরোলেই আগামীকাল ভোরের পূর্বাকাশে দেখা দেবে নতুন বছরের সূর্য। এসে গেল আরও একটা নতুন বছর। নতুন আশায় বুক বেঁধে নতুন করে পথ চলার ব্রত। কিন্তু অতীতের বীজেই যে ভবিষ্যতের বৃক্ষ- সে তো আর নতুন নয়। তাই পিছনে ফিরতেই হয়। দেখে নিতে হয়। কেমন গেল, কী মিলল, কী হারাল। আগামীতেই বা কী হবে। এই পিছিয়ে দেখাটা পিছনে যাওয়া নয়, আসলে সামনে এগোনোর তাগিদেই।
ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টে বিদায় নিচ্ছে ২০২০ সাল। কিন্তু এমন একটি ভয়াল বছর অতীতে তেমন একটা আসেনি বিশ্ববাসীর সামনে। একটিমাত্র ভয়াল প্রাণঘাতী ভাইরাস পৃথিবীর সবকিছুকেই যেন ওলট-পালট করে দিয়েছে। করোনাভাইরাস নামক কোভিড-১৯ মহামারীতে আজও যেন থমকে আছে গোটাবিশ্ব। প্রতিবারের মতো বিদায়ী এ বছরটিতেও অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনা, সংঘাত, রাজনৈতিক পালাবদল দেখেছে বিশ্ব, কিন্তু মহামারীর কাছে হারিয়ে গেছে সবকিছু। প্রতিদিন এই ভাইরাসে ঝরে যাচ্ছে বহু মানুষের প্রাণ। তাই নতুন বছরে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের একটিমাত্রই চাওয়া- ‘বিশ্ব মুক্ত হোক এই প্রাণঘাতী ভাইরাস থেকে, ভয়হীন প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিক বিশ্বের প্রতিটি মানুষ।’
দেখতে দেখতে কেটে গেল আরেকটি ঘটনাবহুল বছর। দিনপঞ্জিকার শেষ পাতাটি উল্টে যাবে আজ। নানা কাজের ফিরিস্তি লেখা নিত্যসঙ্গী হয়ে হাতখাতাটি হয়ে পড়বে সাবেক। পরমায়ুর বৃক্ষ থেকে ঝরে যাবে একটি পাতা। মহাকাল নামের এক অন্তহীন মরুভূমির বুকে যেন এক ফোঁটা জল। কিন্তু গোটাবিশ্বকে রীতিমতো নাস্তানাবুদ করেই বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল-২০২০।
গোটাবিশ্বের মতো বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বিশ্বকে তাক লাগিয়ে উন্নয়ন ও সাফল্যের মহাসোপান দিয়ে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার চাকাকেও স্থবির করে দিয়েছিল প্রাণঘাতী এই ভাইরাস। করোনাভাইরাস এদেশের ঈর্ষণীয় প্রবৃদ্ধির চাকাকে নামিয়ে আনলেও বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশগুলো যখন বিপর্যস্ত, তখনও বর্তমান সরকারের অসামান্য কৃতিত্বে দেশের অর্থনীতি সচল রেখেও কার্যকরভাবে করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। সর্বশেষ ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের মধ্যে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ ২০তম স্থান অর্জন করেছে। বিদায়ী বছরজুড়েই বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রতিটি মানুষের কাছে কয়েকটি নতুন শব্দের সঙ্গে নিজের জীবনকে মানিয়ে নিয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- মাস্ক ব্যবহার, হাত ধোয়া, কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন, করোনা নেগেটিভ-পজিটিভ এবং সর্বশেষ করোনা থেকে মুক্তির জন্য ভ্যাকসিন বা টিকা।
প্রাণঘাতী করোনার ছোবলে বছরজুড়েই প্রায় স্থবির হয়েছিল অর্থনীতি, রাজনীতিসহ সবকিছু। বাংলাদেশেও এই মহামারী করোনা রাজনীতিকে স্থবির করলেও দেশের অগ্রগতি ও অর্থনীতির চাকাকে একেবারে স্থবির করে দিতে পারেনি। বরং শুধু বিদায় বছর ২০২০ নয়, ক্ষমতার গত একযুগ ধরে দেশের মানুষসহ গোটাবিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্ব আর কৌশলী অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশ আজ নব-পরিচয়ে পরিচিতি পাচ্ছে। বিদায়ী বছরে প্রাণঘাতী করোনা মহামারীসহ শত প্রতিকূলতার মধ্যেও এগিয়ে যাওয়ার রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। আর এই এগিয়ে যাওয়ার গল্পের প্রধান কারিগরই হচ্ছেন রেকর্ডসংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা।
আজ মহাকাল সেভাবেই মুছে দেবে বহুল আলোচিত ২০২০কে। ‘যেতে নাহি দিব’-এ চিরন্তন বিলাপধ্বনীর ভেতরে আবহমান সূর্য একটি পুরনো দিবসকে আজ কালস্রোতের ঊর্মিমালায় বিলীন করে পশ্চিম দিগন্তে মিলিয়ে যাবে। বর্ষবরণের আবাহন রেখে কুয়াশামোড়া পাণ্ডুর সূর্য আজ বিদায় নেবে মহাকালের যাত্রায়। সময় হলো খ্রিস্টীয় ২০২০ সালকে বিদায় বলার। খ্রিস্টীয় নতুন বছর ২০২১ সালকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী।
সময় যায়। সময় যাওয়ার সময় বদলে যায় অনেক কিছুই। এ হলো পরম সত্য। সময় যেন এক প্রবহমান মহাসমুদ্র। কেবলই সামনে এগিয়ে যাওয়া, পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। তাই তো জীবন এত গতিময়। সেই গতির ধারাবাহিকতায় মহাকালের প্রেক্ষাপটে একটি বছর মিলিয়ে গেল। আজ আলোড়িত, মানুষের কাছে পরিচিতি পাওয়া ভয়াল বর্ষ বিদায়ের দিন। জীর্ণ ঝরা পল্লবের মতো সরল রৈখিক গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে আজ খসে পড়বে ‘২০২০’। মধ্যরাতে নতুন বছর ২০২১কে স্বাগত জানানোর উৎসবের বাঁশি বেজে উঠবে সবার প্রাণে। তবে প্রতিবছরের মতো নতুন বছরেও উৎসবে মেতে উঠতে পারবে না বিশ্বের মানুষ। তবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কণ্ঠে, প্রাণে ও আকুতিতে থাকবে একটিইমাত্র স্লোগান- ‘করোনা তুমি বিদায় হও, বিশ্বকে পূর্বের মতো সুন্দরভাবে বাঁচতে দাও’।
আগামীকাল থেকে শুরু হবে নতুন প্রত্যাশার নতুন বছর, কিন্তু যে বছরটি হারিয়ে গেল জীবন থেকে, ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে, তার সবই কি হারিয়ে যাবে? মুছে যাবে সব? না, সবকিছু মুছে যায় না। ঘটনাবহুল ২০২০’র ঘটনার রেশ টেনেই মানুষ এগিয়ে যাবে ২০২০ সালের মধ্যরাত্রির পথে। অনেক ঘটনা মুছে যাবে বিস্মৃতির ধুলোয়। আবার পাওয়া না পাওয়ার অনেক ঘটনা থাকবে উজ্জ্বল হয়ে। করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়েছে। বিশ্বের সব মানুষের প্রত্যাশা ঘাতক এই ভাইরাস থেকে মুক্তি পাবে সবাই, আর মাস্ক, কোয়ারেন্টাইন কিংবা আইসোলেশনে নয়, বুক ফুলিয়ে মুক্তির বাতাস গ্রহণ করবে প্রাণভরে।
প্রতিবারের মতো এবারও নতুন সূর্যালোকে নতুন আশা ও স্বপ্ন নিয়ে নতুন একটি বছরে যাত্রা শুরুর জন্য প্রস্তুত সবাই। অসীম প্রত্যাশা নিয়ে মানুষ অপেক্ষা করছে আজ মধ্যরাতের প্রথম প্রহরের জন্য, যখন সূচিত হবে নতুন আকাক্সক্ষায় উদ্ভাসিত হবে নতুন বছর। যে বছরের খেরোখাতায় চোখ বুলালেই বয়ে যায় আনন্দ-বেদনার স্রোত। তবে এবার সুখের চেয়ে বেদনায় গোটাবিশ্বকে নীল করেই বিদায় নিচ্ছে ২০২০ সাল। হিসেবের খেরোখাতায় জমে আছে অনেক বিয়োগ-ব্যথা, হারানোর কান্না, নানা গ্লানি আর মালিন্যের দাগ। বছরজুড়ে অপ্রত্যাশিত নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় আমাদের মন ভীষণ ভারাক্রান্ত, তবু নিরাশার গভীর থেকে ফুটে ওঠে বিপুল আশার আলো, ধ্বংসস্তূপ থেকে ফোটে নবতর জীবনের ফুল। আমরা আবারও মেতে উঠি সৃষ্টিসুখের উল্লাসে, বৈরী সময়কে মাড়িয়ে হেসে গেয়ে উঠি জীবনের জয়গান।
আজ রাত পেরোলেই কাল পূর্বকাশে উঠবে যে নতুন সূর্য- সে সূর্য নতুন বছরের। নতুন আশায় বুক বেঁধে আরও একটি নতুন বছরের দিনলিপি পড়ে থাকবে পেছনে। নতুন বছরে নতুন সূর্যের অসীম প্রতীক্ষা মানুষের। উৎসব করতে না পারলেও করোনা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা নিয়েই এবার মানুষ স্বাগত জানাবে ইংরেজী নতুন বছর ২০২১ সালকে। ইংরেজী পঞ্জিকার সার্বজনীনতায় কাল বিশ্ববাসীও মেতে উঠবে নতুন বছরের আগমনী বার্তায়। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত শুভ নববর্ষ ২০২১। ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’- উচ্চারিত হবে বিশ্বের শত কোটি মানুষের কণ্ঠে।
যে প্রত্যাশার বিশালতা নিয়ে ২০২০ সালের যে প্রথমদিনটি বরণ করা হয়েছিল সেই প্রত্যাশার সব কি পূরণ হয়েছে। হয়নি। কিন্তু যা পাওয়া গেছে তাও কম নয়। নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র শক্তভাবে মোকাবেলা করে সৃষ্টির জাগরণে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে বর্তমান সরকার। করোনা মহামারীর মধ্যেও সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজাল ছিন্ন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় আজ সবদিক থেকে সমৃদ্ধির মহাসড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। হয়েছে পদ্মা সেতুর মতো আত্মমর্যাদার প্রতীক। প্রবৃদ্ধি ও রিজার্ভে সৃষ্টি করেছে নতুন নতুন মাইলফলক।
বিদায়ী ২০২০ বছরটাও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ শুরু করেছিল উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাযজ্ঞ নিয়েই। কিন্তু হঠাৎ করেই করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীতে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। গত এক বছরে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে বিশ্ব ব্যবস্থা টালমাটাল। করোনায় প্রভাব ফেলে উন্নয়ন, অগ্রগতি, অর্থনীতি- এমনকি রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। করোনার আঘাতে বিশ্বের মোড়ল বলে খ্যাত উন্নত দেশগুলোও যখন বিপর্যন্ত, অর্থনীতি-রাজনীতি স্তব্ধ- এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বকে তাক লাগিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বিদায়ী বছরে ভয়াল করোনা মোকাবেলা, স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা, একটি মানুষকে বুভুক্ষ যেন না থাকে সে জন্য সবার ঘরে ঘরে খাদ্য-নগদ অর্থ পৌঁছে দেয়ার বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার পাশাপাশি পুরো বছর ধরে রাজনীতির মাঠ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে সর্বত্র উন্নয়ন-অগ্রগতির চাকা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এর প্রধান চালিকাশক্তিই ছিলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
সরকার ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে সমান্তরালভাবে ব্যবহার করে করোনা মোকাবেলার পাশাপাশি বিশাল অঙ্কের প্রণোদনা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল, দলে শুদ্ধি অভিযান, সম্মেলন হয়ে যাওয়া জেলা-মহানগরসহ সকল সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার মাধ্যমে দলকে সারাদেশে চাঙ্গা করে তোলা, বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে সহযোগী ও ভাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোতে ক্লিন ইমেজের নতুন নেতৃত্ব গঠন, দুর্নীতিবিরোধী অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে বিস্ময়। আর বিস্ময়কর সাফল্যের কারিগরই হচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভূমিধস সংখ্যাগরিষ্ঠতা আসনে বিজয়ী হয়ে রেকর্ড সংখ্যক চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবেই শুধু কোণঠাসাই নয়, অস্তিত্বের চরম সঙ্কটের মুখে দাঁড় করিয়েছেন প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নতুন মুখোশ নিয়ে আবির্ভূত হওয়া যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্টের জোটকে। ক্ষমতার গত প্রায় একযুগ ধরেই গোটাবিশ্ব দেখছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ম্যাজিক। দেশের উন্নয়ন তিনি এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ হতে চায়। কেননা প্রধান ১০ সূচকের সবগুলোতেই পরাজিত পাকিস্তান এখন বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে।
সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে প্রমত্তা পদ্মা সেতুর বুকচিরে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণযজ্ঞ প্রায় সম্পূর্ণ হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। নির্মাণ কাজ অনেকদূর এগিয়ে গেছে রাজধানীতে মেট্রোরেল নির্মাণ। দেশের ইতিহাসে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে দারিদ্র্যের হার ২০ ভাগে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে সরকার। সরকারের দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ পেয়েছে বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। নতুন বছর ২০২১ সালের অনেক প্রত্যাশার বীজও বুনে গেছে বিদায়ী ২০২০।
করোনাভাইরাসের কারণে প্রতিকূল পরিস্থিতির মাঝেও আর্থিক দিক থেকে অনেকটা হেসে-খেলেই বিদায়ী বছরটা পার করেছে সরকার। যদিও করোনা মহামারীকালে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিল সরকার। জুন মাসে যখন বাজেট ঘোষণা করা হয তখন পৃথিবীর বড় বড় দেশ অর্থনৈতিক সঙ্কটে ঘোর অন্ধকার দেখছিল। এমন সঙ্কটের সময়ও সরকার মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করেছে। অর্থ সংস্থানের বড় চ্যালেঞ্জও হেসেখেলেই পার করছে ক্ষমতাসীন সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের তথ্য বলছে, অর্থনীতির বিবেচনায় স্বাচ্ছন্দ্যেই রয়েছে সরকার। করোনার কারণে মার্চ থেকে টানা তিন মাস দেশের মানুষ ছিল প্রায় গৃহবন্দী। বিশাল জনগোষ্ঠীর একটি বৃহৎ অংশকে প্রায় ঘরেই খাবার ও নগদ অর্থ পৌঁছে দিতে হয়েছে সরকারকে। অর্থনীতির স্থবিরতা কাটাতে ২১ দফা প্রণোদনা প্যাকেজও ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগের চেয়ে একদিকে ব্যাংক ঋণ কমেছে, অপরদিকে করোনাকালেও সরকারের বাড়ছে রাজস্ব আয়। রেমিটেন্সের ওপর ভর করে বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সবমিলিয়ে মহামারীর দুঃসময়েও অর্থের সংস্থান ও উৎস নিয়ে সরকার যে কোন সময়ের চেয়ে স্বাচ্ছন্দ্যেই আছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে ঘটা করে; নানা আয়োজনে আসবেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা- বছরজুড়ে জাতির জনকের জন্মোৎসবের বর্ণিল সব প্রস্তুতিই চূড়ান্ত ছিল বিদায়ী বছরের শুরুতেই। কিন্তু বিদায়ী বছরে মার্চে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস হানা দিলে সরকারকে পিছপা হতে হয়। বাহ্যিক সামাজিক সব আয়োজন প্রায় চূড়ান্ত হলেও জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থগিত করা হয়।
মহামারীর বাধায় উদযাপন বাধাগ্রস্ত হলেও আশা ছাড়েনি বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে মুজিববর্ষের সময়কাল ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ। মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি হলে মুজিববর্ষের স্থগিত থাকা অনুষ্ঠানগুলো কখন কিভাবে করা যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলে। এখনই সঙ্গে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সুযোগ। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল শক্তি আবারও ঐক্যবদ্ধ হবে ঠিক একাত্তরের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ওপর ভর করেই।
পুরো বছরই রাজনীতির মাঠ শান্ত থাকলেও শেষ মেয়াদের দিকে বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের সুমহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য বিরোধিতা, কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচুরের ঘটনা উত্তাপ ছড়ায় রাজনীতির মাঠে। ভাস্কর্যবিরোধী হেফাজতসহ উগ্রসাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। ভাস্কর্যবিরোধী অপশক্তিকে শক্তহাতে নির্মূল করতে রাজপথে নানা কর্মসূচী পালন করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এমনকি বিচারক, আমলা, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে সরকারী কর্মকর্তারাও বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য প্রদানকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। তীব্র গণবিস্ফোরণের ভয়েই উগ্রবাদীরা আবারও গর্তে লুকাতে বাধ্য হয়েছে।
এখন নতুন বছর আর নতুন সূর্যের অপেক্ষায় দেশবাসী। অপেক্ষা কেবল মানুষের নিরাপত্তা, শান্তি, স্বস্তি, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসমুক্ত অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণ এবং সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির দেশ গড়ার। টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে এ প্রত্যাশা রেখেই আগামীকাল শুক্রবার থেকে নতুন বছরে, নতুন জীবনে যাত্রা করবে এ দেশের মানুষ। কাল শুরু হবে আরও একটি নতুন বছর ২০২১। বিদায় ২০২০। চিরতরে বিদায় হোক প্রাণঘাতী করোনা বা কোভিড-১৯।
0 Comments