Advertisement

কক্সবাজার মহাসড়কের ৪ সেতু উন্মুক্ত হচ্ছে মে মাসেই

চকরিয়া প্রতিনিধি:

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ অংশে দোহাজারী সাঙ্গু নদী ও বরুমতি খালের উপর নির্মাণাধীন ছয় লেনের ২টিসহ চারটি সেতুর কাজ খুব দ্রুত এগুচ্ছে। এরমধ্যে ৬০ মিটার লম্বা বরুমতি সেতুতে একসাথে ছয় লেনের কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া ২৩৮ মিটার লম্বা দোহাজারী সাঙ্গু, ৬০ মিটার লম্বা পটিয়ার ইন্দ্রপুল ও ৩১০ মিটার লম্বা চকরিয়ার মাতাহুমুরী সেতুর প্রথমে ৩ লেনের (১৫.৬০ মিটার) কাজ করা হচ্ছে। যা আগামী মার্চের মধ্যেই শেষ হবে।

ইতিমধ্যে সবগুলো সেতুতে গার্ডার ও স্লাব বসানোর কাজ চলছে। সাঙ্গু সেতুর ৭৫ মিটার আর.সি.সি ঢালাই দৃশ্যমান হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে আরো ৪০ মিটার আর.সি.সি ঢালাই সম্পন্ন হবে। মার্চের মধ্যে ৩ লেনের কাজ শেষে মে মাসের মধ্যেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। পরবর্তীতে বিদ্যমান পুরোনো সেতুগুলো ভেঙে বাকি ৩ লেনের (১৫.৬০মিটার) কাজ শুরু করা হবে। এছাড়া বরুমতি সেতুর দু’পাশে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও পুরোদমে শুরু হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সাথে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। ৩১.২০ মিটার প্রশস্থ আধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিতব্য এসব সেতুর দুই পাশে হালকা যানবাহন চলাচলের জন্য রাখা হবে বিশেষ ব্যবস্থা।
‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট’ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) যৌথ আর্থিক সহায়তায় মহাসড়কে ছয় লেনের এই চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। এই চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ পেয়েছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান স্পেক্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ জিয়াউল হক জানান, চন্দনাইশের বরুমতি সেতুর ছয় লেন, দোহাজারী সাঙ্গু ও চকরিয়ার মাতামুহুরী সেতুর তিন লেনের ৮০% কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, মাতামুহুরী সেতুর ৮টি পিলারের মধ্যে ১টি পিলার, সাঙ্গু সেতুতে ৭টি পিলারের মধ্যে ২টি পিলারের কাজ বাকি আছে। এরমধ্যে সাঙ্গু সেতুতে ১টি পিলার আজ (৪ জানুয়ারি) ঢালাই দেয়া হবে। বাকি পিলারটির কাজও ১০ দিনের মধ্যে শেষ করা হবে। বরুমতি সেতুর একসাথে ছয় লেনের কাজও শেষের পথে। পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতুতে পিলার নির্মাণের কাজ শেষে এখন গার্ডার ও স্ল্যাব বসানোর কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, এ সেতুরও প্রায় ৭০% কাজও শেষ হয়েছে। সব মিলিয়ে আগামী মার্চের মধ্যেই বরুমতি সেতুর ছয় লেন এবং মাতামুহুরী, সাঙ্গু ও ইন্দ্রপুল সেতুর তিন লেনের কাজ শেষ করা হবে।
পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে যাওয়া আসার প্রধান মাধ্যম হলো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য জেলা বান্দরবানে যাতায়াতের প্রধান মাধ্যমও এই মহাসড়ক। তাই পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ঘিরে রেললাইন নির্মাণসহ অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বর্তমান সরকার। তার মধ্যে এই সড়কে যেসব নদী ও খাল রয়েছে তার উপর ছয় লেনের সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি অন্যতম। এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিন দোহাজারী সাঙ্গু ও বরুমতি সেতু প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, সেতু নির্মাণ কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলী এবং শ্রমিকরা পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। দোহাজারী সাঙ্গু সেতুর ১১৫ মিটার দৃশ্যমান হয়েছে। চলছে বাকি ২টি পিলার নির্মাণের কাজ। বরুমতি সেতুর ৩টি পিলারের উপর গার্ডার বসানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রকৌশলীরা। এ সেতুর উভয় পাশে এখন চলছে এপ্রোচ সড়ক নির্মাণের কাজও। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ছয় লেনের চারটি সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের দক্ষিণাংশে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আসবে আমূল পরিবর্তন। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও বান্দরবানে যাতায়াত সহজ হবে এবং দূরত্বও অনেক কমে আসবে। এ অঞ্চলের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে স্বচ্ছলতার পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন।
ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইম্প্রুভমেন্ট প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ জাহিদ হোসেন বলেন, চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে চকরিয়ার মাতামুহুরী, পটিয়ার ইন্দ্রপুল সেতুর তিন লেন এবং চন্দনাইশের বরুমতি (মাজার পয়েন্ট) সেতুর ছয় লেন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তিনি জানান, পাইলিং, জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন জটিলতার কারণে সাঙ্গুতে একটু সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এখন আর কোনো জটিলতা নেই। ফলে মে মাসের মধ্যেই এ সেতুর তিন লেন যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। এরপরই সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও ইন্দ্রপুলে বিদ্যমান পুরনো সেতুগুলো ভেঙে বাকি তিন লেনের কাজ শুরু করা হবে। সবমিলিয়ে ডি.পি.পি’র মেয়াদ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় ২০২২ সালের মে মাসের মধ্যেই এ চারটি সেতুর সম্পূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

Post a Comment

0 Comments