Advertisement

কক্সবাজার-দোহাজারী রেলপথ নির্মাণে সময় বাড়ছে আরও দুবছর!

টিসিএন ডেস্ক: নির্ধারিত সময়ে ঘনিয়ে আসলেও শেষ হয়নি চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। ২০১০ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালে এসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬২ শতাংশ। কাজের যে গতি তাতে নির্ধারিত (২০২২ সাল) মেয়াদ শেষে কাজ সম্পন্ন হবে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে শতভাগ কাজ শেষ হতে লাগতে পারে আরও ৬ মাস। এছাড়া নির্মাণ কাজ শেষে রক্ষণাবেক্ষণ ও ত্রুটি দেখা গেলে তা সংশোধনের জন্য নিয়মানুযায়ী আরও কিছু সময় হাতে রাখা হয়। সেই সময়ের মেয়াদ ধরা হয়েছে দেড় বছর। অর্থ্যাৎ নির্ধারিত ২০২২ সালের পরও আরও ২ বছর সময় লাগবে রেলওয়ের মেগা এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হতে। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার এ মেগা প্রকল্পের ব্যয় না বাড়লেও পুরোপুরি নির্মাণ কাজ শেষ করতে দ্বিতীয় দফায় আরও দুই বছরের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়। রেলভবন ও রেলমন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশন থেকে মেয়াদ বাড়ানোর সেই আবেদনের অনুমোদন আসতে পারে আগামী সেপ্টেম্বরে। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয় তুলে ধরেছেন ৫টি কারণ। তবে এরমধ্যে করোনাকেই মূল কারণ হিসেবে ফোকাস করা হচ্ছে। প্রথমে ২০১০ সালে নেওয়া এ প্রকল্পটির কাজ ২০১৩ সালে শেষ করার কথা ছিল। তবে ২০১৬ সালে প্রকল্পটি সংশোধন করা হয়। সে সময় প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ধরা হয়। ফলে এক যুগেও ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে অন্তত আরও দুই বছর। রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১০ সালে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তার যুক্তিতে ২০১৬ সালে সংশোধনের সময় প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ নির্মাণ শুরুর আগেই প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় ১৬ হাজার ১৮২ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৮৭৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। সম্প্রতি প্রকল্প পরিচালকের পক্ষ থেকে রেল ভবনের পাঠানো প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ঋণ দিচ্ছে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা। বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। প্রকল্পটির অনুমোদিত বাস্তবায়ন মেয়াদকাল ২০১০ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন। তবে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাজ সার্বিকভাবে সম্পাদনের জন্য তা ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বৃদ্ধি করা একান্ত প্রয়োজন। প্রস্তাবনার সঙ্গে মেয়াদকাল বৃদ্ধির পাঁচটি কারণও তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো হলো ভূমি অধিগ্রহণ ও ভূমি হস্তান্তরে বিলম্ব, ক্ষতিপূরণ প্রদানে বিলম্ব ও জমির বাস্তব দখল প্রাপ্তিতে বাধা, বনভূমি ডি-রিজার্ভকরণ ও বনভূমি ব্যবহারের অনুমতি পেতে বিলম্ব, প্রকল্প এলাকা থেকে বৈদ্যুতিক পোল (খুঁটি) স্থানান্তরে বিলম্ব এবং করোনার প্রভাব। প্রকল্পটি বিলম্বিত হওয়ার ব্যাখ্যায় জানানো হয়, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে রামু পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ৩৬৫ একর জমি জেলা প্রশাসন কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তবে তা যথাসময়ে সম্পন্ন হয়নি বিধায় ঠিকাদারকে জমি বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব হয়েছে। আবার এডিবির সেফগার্ড পলিসি অনুযায়ী ভৌত কাজ শুরুর আগে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এ ক্ষেত্রেও বিলম্ব হয়েছে। এদিকে প্রকল্পটির আওতায় ১৬৫ একর জমি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ছিল, যা ডি-রিজার্ভকরণসহ প্রকল্পের কাজে ব্যবহারের জন্য অনুমতি পেতে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়। ফলে ২০১৯ সালের শেষাংশে এসে সংরক্ষিত বনাঞ্চলভুক্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ঠিকাদার গাছপালা কাটা ও ভৌত কাজ শুরুর সুযোগ পায়। আবার প্রকল্প এলাকায় পিজিসিবি, বিপিডিবি ও বিআইবি’র বৈদ্যুতিক টাওয়ার ও পোল রয়েছে। এগুলো স্থানান্তরে চার দফা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হয়েছে। তবে এখনও এগুলো স্থানান্তর সম্পন্ন হয়নি। ফলে প্রকল্পের ভৌত কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। এগুলোর বাইরেও করোনা মহামারির জন্য প্রকল্পের কাজ মন্থর হয়ে গেছে। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১২ মে’র মধ্যে মধ্যবর্তী প্রায় দেড় মাস প্রকল্পের কাজ বন্ধ ছিল। পরে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মরতদের অনুপস্থিতিতে প্রকল্পের কাজ বিঘ্নিত হয়েছে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে প্রকল্পের আমদানিকৃত বিভিন্ন মালামাল সঠিক সময়ে দেশে এসে পৌঁছেনি। এসব কারণেও নির্মাণকাজ বিঘ্নিত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো দরকার। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান সিভয়েসকে বলেন, ‘ আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। পূর্ব নির্ধারিত সময়ের (২০২২) মধ্যে আশা করি ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হবে। বাকি ১৫ শতাংশ কাজ শেষ হতে আরও ৬ মাস লাগবে। এছাড়া নির্মাণ কাজ শেষে রক্ষণাবেক্ষণ ও ত্রুটি দেখা গেলে তা সংশোধনের জন্য নিয়মানুযায়ী আরও কিছু সময় হাতে রাখা হয়। সেই সময়ের মেয়াদ ধরা হয়েছে দেড় বছর। তাই নতুন করে দুই বছর মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে।’ মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না বলে দাবি করেন এ প্রকল্প পরিচালক। জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার সিভয়েসকে বলেন, ‘ করোনা, ভূমি জটিলতাসহ অন্তত পাঁচটি কারণে প্রকল্পটির কাজ বিলম্বিত হয়েছে। সেকারণে প্রকল্পটির মেয়াদকাল বাড়াতে প্রকল্প পরিচালক আবেদন করেছেন। আমরা তা মন্ত্রণালয় হয়ে পরিকল্পনা কমিশনের পাঠিয়ে দেব। আশা করি আগামী মাসেই তা অনুমোদন হবে এবং বর্ধিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করি।’

Post a Comment

0 Comments