এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া::
সরকারি নির্দেশনার আলোকে করোনা সংকট কাটিয়ে অবশেষে খুলে দেওয়া হয়েছে দেশের পর্যটন স্পটসমূহ। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার ২০ আগস্ট থেকে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে দেশের প্রথম কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক।
দীর্ঘদিন করোনা সংক্রমণের কারণে বন্ধ থাকলেও সরকারি ঘোষণার আলোকে সম্প্রতি পর্যটন স্পটসমূহ খুলে দেয়ার পরপর দেশের অপারপর পর্যটন জোনের মতো ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কেও হয়েছে দর্শনার্থী সমাগম। খোলার প্রথমদিনে সাফারি পার্কে বেশ পর্যটক-দর্শনার্থীর আগমন ঘটেছে বলে জানিয়েছেন পার্কের ইজারদারপক্ষের পরিচালক দীপন দত্ত।
সাফারি পার্ক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমণের কবলে নতুন ইজারাদারের মেয়াদে প্রায় চার মাস ১৯ দিন বন্ধ থাকার পর ইতোমধ্যে ভ্রমণপিপাসু পর্যটক-দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেয় ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক। ইতোমধ্যে দর্শনার্থীদের কাছে আরো আকষর্ণীয় করতে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে পার্কের সবগুলো স্পট।
পাশাপাশি চলতি ২০২১ অর্থবছরে অন্তত ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে পার্কের আধুনিকায়নে বাস্তবায়ন করা হয়েছে একাধিক উন্নয়ন প্রকল্প। তৎমধ্যে নতুনরূপে সাজানো হয়েছে বাঘ সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণির বেস্টনী, বড়পরিসরে তৈরি করা হয়েছে বাঘের নিরাপদ আবাসস্থল। এ ছাড়া পার্কের ভেতরে দর্শনার্থীদের চলাচল নিশ্চিতে সংস্কার করা হয়েছে সাত কিলোমিটার ভঙ্গুর সড়ক। আধুনিকায়ন করা হয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ারকে। একইসঙ্গে রঙয়ের তুলিতে নতুনভাবে সাজানো হয়েছে পার্কের প্রতিটি অবকাঠামো।
অপরদিকে, করোনাকালীন কোলাহলমুক্ত পরিবেশ থাকায় ছিল না পর্যটক-দর্শনার্থীদের আগমন। ওই সময় বেশ স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল পার্কের প্রাণিকুল। আর সেই সুযোগে প্রাাণিকুলে যেমন প্রাণচাঞ্চল্য ছিল, তেমনি আগমন ঘটেছে একের পর এক প্রাণিদের প্রসব করা নতুন নতুন অতিথির। বেড়েছে প্রাণিগুলোর পরিবারের সদস্য সংখ্যাও। পার্কের প্রতিটি প্রাণিকুলে বংশবিস্তার ঘটেছে। জন্ম নেওয়া প্রাণির মধ্যে হরিণ, বানর, ভাল্লুক, জলহস্তি। পাশাপাশি জন্মলাভ করেছে ময়ূরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখির। করোনা মহামারিতে পার্কে অন্তত শতাধিক বন্যপ্রাণি।
নতুন অতিথি জন্ম দিয়েছে বলে জানিয়েছে পার্কের কর্তৃপক্ষ। এসব জন্ম নেওয়া বেশির ভাগ প্রাণি নিবিড় পরিচর্যায় বড় করে তুলছেন পার্কের ভেটেরিনারি বিভাগের সদস্যরা।
সাফারি পার্কের পটভূমি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বৈচিত্রে ভরপুর এ জেলা। আছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। চকরিয়া উপজেলাতেই ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক। এটি ‘ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক’ নামেও পরিচিত। নান্দনিক ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক বুনো জীবজন্তুর সমাহারে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন ভিড় করছেন অগণিত দেশি-বিদেশি পর্যটক।
প্রধান ফটকের বাম পাশে রয়েছে ডিসপ্লে ম্যাপ। বেষ্টনীর ভেতরেই বাঘ, সিংহ ও তৃণভোজী প্রাণির বিচরণ। এরা পুরো প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাস করছে। বেষ্টনীর ভেতরেই প্রাণিরা থাকায় সাফারি পার্ক হিসেবে মেনে নেন না অনেকেই। তারপরেও প্রাণি বৈচিত্র্যের অপার সৌন্দর্য মোহিত করবেই। অনায়াসে বাঘ-সিংহসহ অন্য প্রাণী পর্যবেক্ষণ করার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যে কেউ চাইলেই বাসে করে ঘুরে ঘুরে পুরো পার্ক দেখতে পারবেন। পাশাপাশি পার্কে তথ্য শিক্ষাকেন্দ্র, প্রাকৃতিক ঐতিহাসিক জাদুঘর এবং বিশ্রামাগার রয়েছে। প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত নির্জন উঁচু-নিচু টিলা, প্রবহমান ছড়া, হ্রদ, বিচিত্র গর্জনের মতো সুউচ্চ ঐতিহ্যবাহী প্রাকৃতিক বৃক্ষ চিরসবুজ বনের জানা-অজানা গাছ-গাছালি, ফল-ভেষজ উদ্ভিদ, লতার অপূর্ব উদ্ভিদের সমাহার ও ঘন আচ্ছাদনে গড়ে উঠেছে এ সাফারি পার্ক।
ছায়াঘেরা পথ, সবুজ বনানী, জানা-অজানা গাছের সারি, পাখি আর বানরের কিচিরমিচির সব কিছু মিলিয়ে যেন এক অসাধারণ অনুভূতি। অস্বচ্ছজলে জলহাতির মুখ উঁচিয়ে থাকা বা বেষ্টনীর ভেতর বাঘের হালুম, হাজার পাখির কিচিরমিচির মুগ্ধ করবে যে কাউকে। কিছুদিন আগে যোগ হওয়া জেব্রার দল, বুনোহাতির বিচরণ ও বানরের দুষ্টুমি প্রাকৃতিক পরিবেশ পাবেন। ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক মূলত হরিণ প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এ পার্কে স্বাদু পানির কুমির যেমন আছে, তেমনি আছে লোনা পানির কুমির। এখানে বন্যপ্রাণির মধ্যে রয়েছে জেব্রা, বাঘ, সিংহ, হাতি, ভালুক, গয়াল, জলহস্তী, মায়া হরিণ, সাম্বা হরিণ, চিত্রা হরিণ, প্যারা হরিণসহ পাখ-পাখালির সমাহার। পথের ধারে উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যে কেউ দেখতে পারবেন পুরো পার্কের সীমানা পর্যন্ত। উপভোগ করতে পারবেন অপার সৌন্দর্য। পার্কজুড়েই রয়েছে বিভিন্ন প্রাণির ভাস্কর্য। আছে পার্কের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা। ভেতরে রয়েছে দর্শনীয় বাংলো।
এছাড়া ডাটাবেজ থেকে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা বন্যপ্রাণি ও উদ্ভিদ জগতের ধারণা পাবে। পার্কের প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে অর্কিড হাউজ। সেখানে দেশি-বিদেশি অন্তত ৫০ প্রজাতির অর্কিড সম্পর্কে বিশদ ধারণা পেতে পারবে শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। পার্কের বাইরে প্রধান ফটকের পাশে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নান্দনিক ভাস্কর্য। পার্কে বিশ্রামের জন্য রয়েছে একাধিক ছাতা, শেড ও বে । প্রাকৃতিক কাজ সারতে রয়েছে পাবলিক টয়লেট।
মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার সরকারি ঘোষণা মতে সাফারি পার্ক বন্ধ থাকে। তবে বিশেষ দিবসে ছুটির দিনেও পার্ক খোলা থাকে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পার্কে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটক-দর্শনার্থীরা।
0 Comments